আজ রবিবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Surmakontho LogoBanner Ads

শিরোনাম

 নান্দনিকতায় গড়া মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য পেনাং

নান্দনিকতায় গড়া মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য পেনাং ছবি

আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমের দ্বীপরাজ্য পেনাং। ইতিহাস আর নান্দনিকতার মিশেল রাজ্যটি। প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে সম্পদ দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়াকে। কুয়ালালামপুর মানে ঝাঁ চকচকে ও ঐতিহ্যের শহর। লঙ্কাভি মানে সমুদ্রতট। গেনতিং হাইল্যান্ড বলতে পাহাড়। আর এ তিনটেই এক সঙ্গে পাওয়া যাবে পেনাংয়ে।


মূলত একথা বলে দেশের উত্তর-পশ্চিমের ওই দ্বীপরাজ্যকে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরছে মালয়েশিয়া। প্রচুর পাহাড়-পর্বত আর দ্বীপের সমাহার এ মালয়েশিয়ায় পেনাং একটি অসাধারণ দ্বীপ। এটি একটি প্রদেশও। এ দ্বীপ প্রদেশের রাজধানীর নাম জর্জ টাউন। মূল ভূখন্ড থেকে দ্বীপে যাতায়াতের জন্য মোট দুইটি সেতু রয়েছে। ইতিহাস আর নান্দনিকতার মিশেল পেনাংকে আরো মোহনীয় করেছে। এক সঙ্গে এমন রসায়ন সহজে মেলে না।


পেনাং-কে সে দেশের ভোজন-রাজধানীও বলা হয়। এত বৈচিত্র্যময় খাদ্যের সম্ভার সেখানে। আবার চিনা নববর্ষ-সহ বেশ কিছু জমকালো, রঙিন উৎসবও হয় সেখানে। ইতিহাস পর্যালোচনায় পেনাং এর রাজধানী জর্জটাউন সরগরম বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের ভ্রমণার্থীর পদচারণে। মালয়েশিয়ার সুলতান জিয়া কি ভেবেছিলেন তার সালতানাত একদিন মুখরিত হবে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায়। পেনাং দখল করতে আসা ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ফ্রান্সিস লাইট কি ধারণাও করতে পেরেছিলেন যে পেনাং স্মরণকালের সবচেয়ে আধুনিক হেরিটেজ শহর হবে!


ফ্রান্সিস লাইট ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। কিন্তু সামনে আরও উন্নতির আশায় তিনি নৌবাহিনীর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ফ্রান্সিস দেখলেন যে ওলন্দাজ আর পর্তুগিজরা বেশ আগেই মালয়েশিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করেছে অন্যান্য ছোট প্রদেশে। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনো মালয়েশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়নি। ১৭৭২ সালে ফ্রান্সিস তদানীন্তন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংকে তার মালয়েশিয়া সম্পর্কিত আগ্রহের কথা জানায় যে পেনাং প্রাচ্যের বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিক সেই মুহূর্তে তার কথা আমলে নেয়নি।


দশ বছর ফ্রান্সিসের কর্মস্থল থাইল্যান্ডের সালাং নামক স্থানে ছিল। সেখানে ফ্রান্সিস একটি প্রায় ডুবে যাওয়া ফরাসি ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত করে আনন্দে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। ভাষাগত সমস্যাও ছিল না কারণ ততদিনে তিনি মালাউয়ি, থাইসহ আরও কয়েকটি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছিলেন। বিয়ে করেছিলেন পর্তুগিজ-থাই বংশোদ্ভূত নারীকে।


১৭৮৫ সালে তিনি সিয়ামিস বা থাই রাজাকে সতর্ক করে দেন বার্মিজ আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে। রাজা তার কথায় গুরুত্ব দেননি। সতর্কবাণীতেও খুব বেশি কাজ হয়নি কারণ, তত দিনে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।


এদিকে পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ নৌবাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ফরাসি নৌবাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠার। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন খানিক নড়েচড়ে বসল ফ্রান্সিসের দশ বছর আগের করা প্রস্তাবের ব্যাপারে। সালটা ১৭৮৬, ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানির পক্ষ থেকে পেনাং দ্বীপটি লিজ নিলেন ফ্রান্সিস লাইট মালয়েশিয়ার তদানীন্তন কেদাহ সালতানাতের সুলতান আবদুল্লাহ মুকাররম শাহর কাছ থেকে।


সুলতান আবদুল্লাহ ছিলেন নিরূপায়। আশপাশের রাজ্য থাইল্যান্ড আর বার্মা থেকে তার রাজ্য দখলের চাপ মুহুর্মুহু অনুভব করছিলেন। সুলতান আবদুল্লাহর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তাই চুক্তির শর্তই ছিল সামরিক সাহায্য লাভ। পেনাং দ্বীপটির রাজধানী স্থাপিত হলো জর্জ টাউন তদানীন্তন গ্রেট ব্রিটেনের রাজা জর্জের নামানুসারে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, উপাসনালয় ইত্যাদি।


ফ্রান্সিস লাইট সুলতান আবদুল্লাহকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিলেন। পেনাং কোনো রকমের সামরিক সাহায্য পাচ্ছিল না ব্রিটিশরাজের পক্ষ থেকে। ফলস্বরূপ ১৭৯১ সালে সুলতান আবদুল্লাহ পেনাং দ্বীপটি ফিরে পাওয়ার জন্য আক্রমণ করেন, কিন্তু দুর্বল সামরিক বাহিনীর কারণে পরাস্ত হন। সেই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঘাঁটি পাকাপোক্ত হয়।


সেই থেকে ১৮৭৪ সাল অবধি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মালয়েশিয়ায় নিজেদের ঔপনিবেশিক সীমানা বাড়িয়েই চলছিল। সে বছর কেদাহর সুলতানের সঙ্গে ব্রিটিশরাজ একধরনের চুক্তিতে পৌঁছায় যে বার্ষিক ১০ হাজার স্প্যানিশ মুদ্রা দক্ষিণার বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার পেনাং দ্বীপ ব্যবহার করবে।


ফ্রান্সিস লাইট যখন পেনাং প্রতিষ্ঠা করলেন, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল শুল্কমুক্ত পেনাং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দিয়ে ব্যবসায়ীদের ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসায়ে আকৃষ্ট করা এবং একটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা। কারণ, কাছের রাজ্যেই ওলন্দাজরা ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে ছিল। ফ্রান্সিসের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। যদিও ফ্রান্সিস গত হয়েছেন ১৭৯৪ সালে। পেনাং আজ অবধি মালয়েশিয়ার অন্যতম ব্যবসায়িক বন্দর হিসেবে পরিচিত এবং পেনাংকে বলা হয় ‘পার্ল অব ওরিয়েন্ট’ বা প্রাচ্যের মুক্তো।


১৮০৫ সালে পেনাংকে ব্রিটিশ সরকারের আলাদা প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন হয়। মালয়েশিয়ার আধুনিক বিচারব্যবস্থার গোড়াপত্তন এই জর্জ টাউনেই হয়। ১৯৪১ সালে জাপান পেনাং দখল করে নেয়। ব্রিটিশরাজ ১৯৪৫ সালে পেনাং পুনরুদ্ধার করে। ১৯৫৬ সালে পেনাং স্বাধীনতা লাভ করে গ্রেট ব্রিটেনের শাসন থেকে। আগে থেকেই পেনাং শিক্ষাদীক্ষা আর ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিচিত। বহুজাতিক, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ রাজ্য পেনাং।


মালয়েশিয়ার সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত পেনাং রাজ্যে মালয়েশিয়ান বা ভূমিপুত্রা, চায়নিজ, ভারতীয়, ইউরোশিয়োদের বসবাস। প্রধান ভাষা মালে, ইংরেজি, চায়নিজ ও তামিল। পেনাংয়ের শতকরা ৯৯% ভাগ মানুষ শিক্ষিত এবং পেনাং আগাগোড়াই একটি আধুনিক শহর যে প্রদেশে কোনো গ্রাম নেই। এখনো রাজধানী জর্জ টাউন।


জর্জ টাউনের হেরিটেজ সাইট বাদে পেনাং রাজ্য একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক, মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। সুউচ্চ ভবন, রাস্তাঘাট এবং শহরের অবকাঠামো কুয়ালালামপুর বা সিঙ্গাপুরের মতোই উন্নত। পেনাং শুধু বিনোদন ভ্রমণের জন্য নয়, বাণিজ্যিক অধিবেশনেরও কেন্দ্র। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার ব্যবসায়িক সম্মেলন ও হয় ওখানে।


আসিয়ান দেশসমূহের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ। উভয় দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম যেমন, কমনওয়েলথ, ওআইসি ও ন্যামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এছাড়া মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। অতি সম্প্রতি দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার রাজ্যের গভর্নর তুন দাতো' সেরি উতামা আহমেদ ফুজি বিন হাজি আবদুল রাজ্জাক এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।


সাক্ষাতে হাইকমিশনার, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এশিয়ার সেরা গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস গভর্নরের নিকট তুলে ধরেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সরোয়ার।


২৩ মে ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর, পেনাংয়ের বাণিজ্য, শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দাতো আব্দুল হালিম হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেন।


পেনাংয়ের বাণিজ্য, শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দাতো আব্দুল হালিম হোসেনের সঙ্গে ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর। ছবি: সংগৃহীত


এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একদিকে যেমন জোরদার হবে, অন্যদিকে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন ডেপুটি হাইকমিশনার। রাজ্যের মাইডা, পোলাউ পিনাং, ইনভেস্ট পিনাং এবং পিনাং ডেভেলাপমেন্ট কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও হাইকমিশনের প্রথম সচিব বাণিজ্যিক প্রণব কুমার ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।


মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী পেনাং এর ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ। আর এ আগ্রহে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আসবেন তারা। আমরাও চাই মালয়েশিয়ার মতো আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগরা আসুক। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বিস্তৃত হোক। সুউচ্চ ভবন, রাস্তাঘাট এবং শহরের অবকাঠামো কুয়ালালামপুর বা সিঙ্গাপুরের মতোই উন্নত হোক আমাদের সোনার বাংলা।

    News 3rd 1st Banner Ads News 3rd 2nd Banner Ads

    এই ক্যাটাগরিতে আরও পড়ুন :

    নান্দনিকতায় গড়া মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য পেনাং ছবি

    নান্দনিকতায় গড়া মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য পেনাং

    ৩ মাস আগে

    নাজিমগড় রিসোর্ট – সিলেট ছবি

    নাজিমগড় রিসোর্ট – সিলেট

    ৩ মাস আগে

    বাংলাদেশ ভ্রমণে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ কানাডার ছবি

    বাংলাদেশ ভ্রমণে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ কানাডার

    ৩ মাস আগে

    সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন লাল শাপলার লেক ছবি

    সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন লাল শাপলার লেক

    ৩ মাস আগে

    ভিসা ছাড়াই যে ৪২ দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ছবি

    ভিসা ছাড়াই যে ৪২ দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

    ৩ মাস আগে